বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা

সূত্র ও নীতিগাথা

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - NCTB BOOK

এ অধ্যায় থেকে আমরা জানতে পারব 

১. সূত্র ও নীতিগাথা কী; 

২. করণীয় মৈত্রী সূত্রের পটভূমি; 

৩. করণীয় মৈত্রী সূত্র: 

৪. নিধিকণ্ড সূত্র এবং 

৫. ধর্মপদ।

 

তোমরা মদনমোহন তর্কালঙ্কার এর "আমার পণ" কবিতাটি শুনে থাকবে।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ২৯

চলো আজ সবাই মিলে কবিতাটি আবৃত্তি করি-

 

সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, 

সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।

আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, 

আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে। 

ভাইবোন সকলেরে যেন ভালোবাসি, 

এক সাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি। 

ভালো ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা, 

পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা। 

সুখী যেন নাহি হই আর কারো দুখে, 

মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে। 

সাবধানে যেন লোভ সামলিয়ে থাকি, 

কিছুতে কাহারে যেন নাহি দেই ফাঁকি। 

ঝগড়া না করি যেন কভু কারো সনে, 

সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে।

 

 

নিচের লিংক এবং কিউ আর কোড থেকে কবিতাটির একটি ভিডিও পেয়ে যাবে।

https://www.youtube.com/watch?v=XI8ACoXrsxk

 

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩০

কবিতাটি অর্থ চিন্তা করে আমাদের জীবনে কোন কোন কাজ করা উচিত আর কোন কোন কাজ করা উচিত না তার একটি তালিকা তৈরি করো।

কোন কোন কাজ করা উচিত

কোন কোন কাজ করা উচিত না

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে ঐ কাগজটি বই এর পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি। খাতায় লিখতে পারি।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩১

তোমার জানা বা শুধু নাম শুনেছ, এমন কয়েকটি ধর্মীয় সুত্র বা নীতিকথার নাম লেখো।

সূত্র ও নীতিগাথা কী;

 

সূত্র ও নীতিগাথা হলো ভগবান বুদ্ধের মুখনিঃসৃত বাণী। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে বুদ্ধ তাঁর শিষ্য ও উপাসক-উপাসিকাদের এগুলো দেশনা করেছিলেন। ত্রিপিটকের অন্তর্গত সুত্তপিটকের বিভিন্ন গ্রন্থে এসব রয়েছে। সূত্র ও নীতিগাথাসমূহে প্রকাশ পেয়েছে বুদ্ধের শিক্ষা বা দর্শনের মর্মবাণী। এগুলো নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতি সাধনের পাশাপাশি ইহলৌকিক মঙ্গলও সাধন করে। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সূত্র ও নীতিগাথা পাঠ করা হয়। সাধারণত বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, বিপদ, রোগ, শোক এবং অশুভ প্রভাব হতে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য এবং সর্বপ্রকার মঙ্গল কামনা করে সূত্র পাঠ করা হয়। যেমন, রতন সূত্র দুর্ভিক্ষ ও মহামারি হতে রক্ষা পেতে, করণীয় মৈত্রী সূত্র ভূত, যক্ষ প্রভৃতির উপদ্রব হতে রক্ষা পেতে, সুপূব্বাহ্ন সূত্র অশুভ গ্রহের প্রভাব হতে রক্ষা পেতে, বোস্তঙ্গ সূত্র সকল প্রকার রোগ-শোক হতে রক্ষা পেতে ও অঙ্গুলিমাল সূত্র গর্ভযন্ত্রণা হতে মুক্তি পেতে পাঠ করা হয়। ত্রিপিটকে আরও অনেক সূত্র আছে যেগুলো পাঠ করলে নানা রকম বিপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায় এবং বহু রকম মঙ্গল সাধিত হয়। এ অধ্যায়ে আমরা করণীয় মৈত্রী সূত্র ও নিধিকণ্ড সূত্র সম্পর্কে জানব।

 

করণীয় মৈত্রী সূত্রের পটভূমি

 

এক সময় ভগবান বুদ্ধ শ্রাবস্তীতে বাস করছিলেন। তখন বর্ষা শুরু হবে। বর্ষাবাসের জন্য ভিক্ষুরা পাহাড়ের গুহা বা বনের মধ্যে সুবিধামতো কোনো স্থান বসবাসের জন্য বেছে নিতেন। হিমালয়ের পাশে বনের মধ্যে একটি স্থানে পাঁচশ ভিক্ষু বর্ষাবাস শুরু করলেন। কাছাকাছি গ্রাম থেকে তাঁরা ভিক্ষান্ন সংগ্রহ ও ভোজন করে পরম সুখে কর্মস্থান ভাবনা করতেন। নির্মল বায়ু সেবন এবং সুখাদ্যে তাঁদের শরীর-মন বেশ ভালো হলো। কিন্তু সমস্যা হলো তাঁদের এ অবস্থানকে কেন্দ্র করে এ স্থানে বসবাসরত কিছু অমনুষ্যের উপদ্রব ও ভয় দেখানোর কারণে তাঁরা বর্ষাবাস ভেঙে শ্রাবস্তীতে ফিরে আসলেন।

বুদ্ধের সাথে ঐ ভিক্ষুদের সাক্ষাৎ হলে বুদ্ধ তাঁদের বললেন যে, বর্ষাবাসের সময় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন ভিক্ষুরা বুদ্ধের কাছে বর্ষাবাসের স্থান ছেড়ে আসার ঘটনা খুলে বললেন। সব শুনে বুদ্ধ বললেন, "ভিক্ষুগণ, তোমরা আবার সে-স্থানে ফিরে যাও। আমি তোমাদেরকে ভয় থেকে পরিত্রাণের উপায় বলে দিচ্ছি”। এই বলে বুদ্ধ তাঁদের করণীয় মৈত্রী সূত্র দেশনা করলেন এবং বললেন, "এই সূত্র শিক্ষা করে বনে ফিরে যাও। প্রতিমাসের আট উপোসথ দিনে এ সূত্র উচ্চস্বরে পাঠ করবে। এ বিষয়ে ধর্মকথা বলবে, প্রশ্নোত্তর করবে, অনুমোদন করবে। সে অমনুষ্যগণ আর ভয় দেখাবে না। তোমাদের উপকারী ও হিতৈষী হবে।"

বুদ্ধের উপদেশ মতো ভিক্ষুরা সেই স্থানে গিয়ে করণীয় মৈত্রী সূত্র পাঠ ও মৈত্রী-ভাবনায় রত হলেন। করণীয় মৈত্রী সূত্র পাঠের প্রভাবে অমনুষ্যদের উপদ্রব বন্ধ হলো। মৈত্রী ও করুণার প্রভাবে তারা আর ভিক্ষুদের কোনো উৎপাত করলো না। অবশেষে ভিক্ষুরা সেখানে বর্ষাবাস শেষ করতে সক্ষম হন। এই সূত্রে নির্বাণ লাভে ইচ্ছুক ব্যক্তিগণের জন্য করণীয় মৈত্রী ভাবনার নির্দেশনা আছে, তাই সূত্রটির নাম 'করণীয় মৈত্রী সূত্র'। পালিতে এই সূত্রের নাম 'করণীয় মেত্তসুত্তং'।

 

 

করণীয় মেত্তসুত্তং (পালি) 

 

১. করণীযমখকুসলেন যন্তং সন্তং পদং অভিসমেচ্চ, 

সক্কো উজুচ সুজুচ সুবচো চম্স মুদু অনতিমানী। 

২. সন্তুস্সকো চ সুভরো চ অল্পকিচ্চো চ সল্লহুকবুত্তি, 

সন্তিন্দ্রিযো চ নিপকো চ অল্পগন্তো কুলেসু অননুগিদ্ধো। 

৩. ন চ খুদ্দং সমাচরে কিঞ্চি যেন বিষ্ণু পরে উপবদেয্যুং, 

সুখিনো বা খেমিনো হোল্ড সব্বে সত্তা ভবন্তু সুখিতত্তা। . 

8 যে কেচি পাণভূতত্থি তসা বা থাবরা বা অনবসেসা, 

দীঘা বা যে মহন্তা বা মঙ্গিমা রস্পকাণুকা থুলা। 

৫ . দিষ্ঠা বা যেবা অদিষ্ঠা যে চ দূরে বসন্তি অবিদূরে, 

ভূতা বা সম্ভবেসী বা সব্বে সত্তা ভবন্তু সুখিতত্তা। 

৬. ন পরো পরং নিকুব্বেথ, নাতিমঞ্চেথ কখচি নং কিঞ্চি, 

ব্যারোসনা পটিঘসও নাএঞ্চমঞ্চস্স দুদ্ধমিচ্ছেয্য। 

৭. মাতা যথা নিযং পুত্তং আযুসা একপুত্তমনুরক্সে, 

এবম্পি সব্বভূতেসু মানসং ভাবযে অপরিমাণং। 

৮. মেত্তঞ্চ সব্বলোকস্মিং, মানসং ভাবযে অপরিমাণং, 

উদ্ধং অধো চ তিরিযঞ্চ অসম্বাধং অবেরং অসপত্তং।

৯. তিষ্ঠং চরং নিসিন্নো বা সযনো বা যাবত বিগতমিদ্ধো, 

এতং সতিং অধিষ্ঠেয্য ব্রহ্মমেতং বিহারং ইধমাহু। 

১০. দিগ্বিঞ্চ অনুপগস্ম সীলবা দস্পনেন সম্পন্নো, 

কামেসু বিনেয্য গেধং ন হি জাতু গল্পসেয্যং পুনরেতীতি।

 

 

করণীয় মৈত্রী সূত্র (বাংলা)

 

১. শান্তিময় নির্বাণলাভে ইচ্ছুক, করণীয় বিষয় সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত ব্যক্তি-সক্ষম, সরল বা ঋজু, খুব সরল, সুবোধ, কোমল স্বভাব ও অভিমানহীন হবেন। 

২. (তিনি সর্বদা যথালাভে) সন্তুষ্ট, সুখপোষ্য, অল্পে তুষ্ট, সংযত ইন্দ্রিয়, অভিজ্ঞ, অপ্রগল্ভ বা বিনীত এবং গৃহীদের প্রতি অনাসক্ত হবেন। 

৩. তিনি এমন কোনো ক্ষুদ্র (নীচ) আচরণ করবেন না, যাতে অন্য বিজ্ঞগণ নিন্দা করতে পারেন। সকল প্রাণী সুখী হোক, ভয়হীন বা নিরাপদ হোক, শান্তি ও সুখ উপভোগ করুক-এরকম মৈত্রীভাব পোষণ করবেন। 

৪. সব প্রাণী অস্থির বা স্থির, দীর্ঘ বা বড়, মধ্যম বা হ্রস্ব, ছোট বা স্কুল। 

৫. দেখা যায় বা দেখা যায় না, দূরে বা কাছে বাস করে, জন্মেছে বা জন্ম নেবে সেই সকল প্রাণী সুখী হোক। 

৬. একে অপরকে বঞ্চনা করো না, কোথাও কাউকেও অবজ্ঞা করো না। হিংসা বা ক্রোধবশত কারো দুঃখ কামনা করো না। 

৭. মা যেমন একমাত্র পুত্রকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করেন, তেমনি সকল প্রাণীর প্রতি অপরিমেয় মৈত্রীভাব পোষণ করবে। 

৮. সর্বলোকের প্রতি অপরিমেয় মৈত্রীভাব পোষণ করবে। জগতের উপরে, নীচে ও চারিদিকে যে সকল প্রাণী আছে, তারা ভেদজ্ঞান-রহিত, বৈরীহীন ও শত্রুহীন হবে। 

৯. দাঁড়ানো অবস্থায়, চলমান অবস্থায়, বসা বা শোয়া অবস্থায় এবং না ঘুমানো পর্যন্ত এই স্মৃতি অধিষ্ঠান করবে। একে ব্রহ্মবিহার বলে। 

১০. শীলবান ও সম্যক দৃষ্টিসম্পন্ন স্রোতাপন্ন ব্যক্তি মিথ্যা দৃষ্টি পরিত্যাগপূর্বক কাম ও ভোগবাসনাকে দমন করে পুনর্বার গর্ভাশয়ে জন্মগ্রহণ করেন না।

 

শব্দার্থ: সন্তং শান্ত; সক্কো সক্ষম বা সমর্থ; অভিসমোচ্চ সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত হয়ে; উজু ঋজু বা সরল; সুজুচ সুঋজু বা অতি সরল; সন্তপ্সকো সন্তুষ্ট ব্যক্তি: সুভরো সুখপোষ্য বা সহজে প্রতিপালন বা সাহায্য করা যায়; অল্পকিচ্চো - অল্পকৃত্য বা অল্প কর্তব্যযুক্ত; সল্লহকবুত্তি যে ব্যক্তি সহজে অভাব বোধ করে না এবং অভাববোধ করলে তা সহজে পূর্ণ করে নিতে পারে, অল্পে তুষ্ট; সন্তিন্দ্রিয়ো শান্তেন্দ্রিয়; নিপকো প্রজ্ঞাবান; অল্পগল্পো - অপ্রগল্ড, চঞ্চলতবান, বিনীত, অহংকারহীন, বিবেকবান, লজ্জাশীল, শিষ্ট; অননুগিন্ধো অনাসক্ত; উপবদেয়্যুং নিন্দা করা; খেমিনো যিনি নিরাপত্তা বা শান্তি উপভোগ করেন; পাণভুতথি জগতের প্রাণিকুল; থাবরা – স্থির; অনবসেসা সম্পূর্ণরূপে; তিরিযঞ্চ বক্রভাবে, অসলভাবে; অসম্বাধং ভেদজ্ঞানরহিত; অবেরং - বৈরহীন; অসপত্তং শত্রুতাহীন; তিষ্ঠ দাঁড়ানো; বিগতমিদ্ধো না ঘুমানো পর্যন্ত; অধিষ্ঠেয্য অধিষ্ঠান; নিকুঝেথ - বঞ্চনা; মানসং ভাবয়ে মৈত্রী পোষণ করবে।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩২

ধর্মীয় বই, ইন্টারনেট বা অন্যন্য উৎস থেকে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দলীয়ভাবে করণীয় মৈত্রী সূত্র বিষয়ে তথ্যবৃক্ষ তৈরি করি।

করণীয় মৈত্রী সূত্রের গুরুত্ব

করণীয় মৈত্রী সূত্রের নৈতিক শিক্ষা হলো, প্রত্যেক জীবের প্রতি মৈত্রীভাব পোষণ করা। কোনো জীবকে অবহেলা না করা। কারও অমঙ্গল কামনা না করা। ঘুমে, জাগরণে, ধ্যানে সব সময় সকল জীবের প্রতি মৈত্রী ভাবনা করা উচিত। কারণ, মৈত্রী ভাবনা চিত্তকে সমাহিত করে। কায়-মন-বাক্য সংযত করে। বৈরিতা বা শত্রুতা দূর করে ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। নিজের জীবনের সঙ্গে তুলনা করে সকল জীবের প্রতি মৈত্রীভাবাপন্ন হতে। শিক্ষা দেয়। অস্থির বা স্থির, দীর্ঘ বা বড়, মধ্যম বা হ্রস্ব, ছোট বা স্কুল, দৃশ্য-অদৃশ্য, কাছের-দূরের, জন্মগ্রহণ করেছে বা করবে এরকম সকল প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে এবং সর্বদা মঙ্গলকামনা করতে উদ্বুদ্ধ করে। বঞ্চনা ও অবজ্ঞা করা থেকে বিরত রাখে। হিংসা পরিত্যাগ ও ক্রোধ দমন করতে সাহায্য করে। সুখে নিদ্রা যায়, সুখে ঘুম থেকে জাগে, পাপ স্বপ্ন দেখে না, মনুষ্য-অমনুষ্য সকলের প্রিয় হয়, তাঁর চিত্ত সমাধিস্থ হয়। অজ্ঞানে মৃত্যুবরণ করে না, মৃত্যুর পর ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ যথার্থরূপে অনুসরণে প্রেরণা যোগায়। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণকারী ব্যক্তি কায়-মন-বাক্যে কোনো পাপ করে না। ফলে তাঁদের দ্বারা কোনো অকুশল কর্ম সম্পাদনও সম্ভব হয় না। নিজে এবং তাঁর সঙ্গে বসবাসকারীগণ নিরুপদ্রব বা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। এভাবে মৈত্রীভাবনাকারী তৃষ্ণা নিরোধ করে পুনর্জন্ম রোধ করেন এবং নির্বাণ লাভ করতে সক্ষম হন।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩৩

করণীয় মৈত্রী সূত্রের কোন কোন বিষয় নিজ জীবনে কীভাবে প্রয়োগ বা চর্চা করবে তার একটি পরিকল্পনা তৈরি কর।

করণীয় মৈত্রী সূত্রের কোন

কোন বিষয় নিজ জীবনে

প্রয়োগ বা চর্চা করবে

কীভাবে প্রয়োগ বা চর্চা করবে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে ঐ কাগজটি বই এর পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি। খাতায় লিখতে পারি।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩৪

করণীয় মৈত্রী সূত্রের কোন কোন বিষয় অন্যদেরও কীভাবে চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে তার একটি পরিকল্পনা তৈরি কর।

করণীয় মৈত্রী সূত্রের কোন

কোন বিষয় অন্যদেরও চর্চা

করতে উদ্বুদ্ধ করবে

কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

 

 

নিধিকণ্ড সূত্রের পরিচিতি

 

ভগবান বুদ্ধের সময়ে শ্রাবস্তীতে একজন ধনাঢ্য শ্রেষ্ঠী বাস করতেন। একদিন শ্রেষ্ঠী বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে পিন্ডদান করছিলেন। সেই সময়ে কোশল রাজের অর্থের প্রয়োজন হওয়াতে তিনি শ্রেষ্ঠীকে নেওয়ার জন্য পাঠালেন। দূত এসে রাজার আদেশ জানায়। তা শুনে শ্রেষ্ঠী দূতকে বললেন, "তুমি এখন যাও, আমি পরম নিধি (ধন) নিধান করছি।" এরপর ভগবান বুদ্ধ আহার শেষ করে দান অনুমোদন করতে গিয়ে পুণ্য সম্পদকে যথার্থ নিধি বলে 'নিধিকণ্ড সূত্র' দেশনা করেন।

নিধিকন্ড সুত্তং

 

১. নিধিং নিধেতি পুরিসো গম্ভীরে ওদকন্তিকে, 

অথে কিচ্ছে সমুগ্ধনে অথায় মে ভবিস্পতি। 

২. রাজতো বা দুরুত্তপ্স চোরতো পীলিতম্স বা, 

ইলম্স বা পমোচ্ছায দুত্তিচ্ছে আপদাসু বা; 

এতদখায় লোকস্মিং নিধি নাম নিধিযতে। 

৩. তাব-সুনিহিতো সন্তো গম্ভীরে ওদকন্তিকে,

 ন সব্বো সৰ্ব্বদা এব তল্স তং উপকম্পতি। 

৪. নিধি বা ঠানা চবতি, সঞ্চবাল্স বিমুযহতি, 

নাগা বা অপনামেন্তি, য্যা বা'পি হরন্তি তং। 

৫. অগ্নিযা বা'পি দাযাদা উদ্ধরন্তি অপপ্সতো,

যদা পুঞ্জযো হোতি সঝমেতং বিনস্পতি। 

৬. যক্ষ্ম দানেন সীলেন সঞ্চমেন দমেন চ, 

নিধি সুনিহিতো হোতি ইথিযা পুরিল্স বা। 

৭. চেতিযুস্থি চ সঙ্ঘে বা পুঞ্চলে অতিথিসু বা, 

মাতরি পিতরি বা'পি অথো জেষ্ঠচ্ছি ভাতরি। 

৮. এসো নিধি সুনিহিতো অজেয্যো অনুগামিকো, 

পহায গমনীযেসু এতং আদায গচ্ছতি।

৯. অসাধারণমঞ্চেসং আচোরহরণো নিধি, 

কথিরাথ ধীরো পুঞ্জানি যো নিধি অনুগামিকো। 

১০. এস দেব-মনুজ্জানং সব্বকামদদো নিধি, 

যং যদে বাভিপথেন্তি সব্বমেতেন লব্ধতি। 

১১. সুবণ্ণতা সুম্পরতা সুসষ্ঠান সুরূপতা, 

অধিপচ্চ পরিবারা সঝমেতেন লব্ধতি। 

১২. পদেসরজ্জং ইস্পরিষং চক্কবত্তি সুখং পিয়ং, 

দেব রদ্ধিম্পি দিব্বেসু সঝমেতেনে লব্ধতি। 

১৩. মানুসিকা চ সম্পত্তি দেবলোকে চ যা রতি, 

যা চ নিম্নান সম্পত্তি সৰ্ব্বমেতেন লস্তুতি। 

১৪. মিত্ত সম্পদ মাগম্ম যোনিসো বে পযুঞ্জতো, 

বিজ্ঞা বিমুক্তি বসীভাবো সঝমেতেন লক্কতি। 

১৫. পটিসম্ভিদা বিমোচ্ছা চ, 

যা চ সাবক পারমী, পচ্চেকবোধি বুদ্ধভূমি সব্বমেতেন লক্কতি। 

১৬. এবং মহিন্ধিযা এসা যদিদং পুঞ্জসম্পদা, 

তস্মা ধীরা পসংসন্তি প-তিা কতপুঞ্জতন্তি।

 

 

 

 

নিধিকন্ড সূত্রের বাংলা অনুবাদ

১. অর্থ প্রয়োজন হলে এটি আমার কাজে লাগবে 

এই ভেবে মানুষ গভীর জলস্পর্শী গর্তে ধন প্রোথিত করে রাখে। 

২. রাজার দৌরাত্য, চোরের উৎপীড়ন, ঋণ, দুর্ভিক্ষ ও আপদ-বিপদ হতে 

মুক্তির জন্য জগতে ধন প্রোথিত করে রাখে। 

৩. গভীর উস্কস্পর্শী গর্তে ধন প্রোথিত হলেও তার সমুদয় 

ধন সব সময় ধন-অধিকারীর উপকারে আসে না। 

৪. উক্ত ধন স্থানচ্যুত হয়, তার (ধনাধিকারীর) স্মৃতি বিহাল হতে পারে, 

নাগগণ স্থানান্তরিত করতে পারে অথবা যক্ষগণ অপহরণ করতে পারে। 

৫. অপ্রিয় উত্তরাধিকারীরা অজ্ঞাত সময়ে তা উদ্ধার করতে পারে অথবা যখন পুণ্য ক্ষয় হয়,

তখন এটির সমস্তই বিনষ্ট হতে পারে। 

৬. স্ত্রীলোক বা পুরুষের দান, শীল, সংযম ও ধর্মগুণের দ্বারা পুণ্যরূপ

যে নিধি (ধন) সঞ্চিত (নিহিত) হয়, তা-ই প্রকৃত সুনিহিত নিধি। 

৭. চৈত্য প্রতিষ্ঠাকল্পে, সংঘ ক্ষেত্রে, পুদ্গল, অতিথি, মাতা-পিতা এবং ভ্রাতার সেবায়, 

যে ধন নিয়োজিত হয়, এটি প্রকৃত সুনিহিত ধন। 

৮. এই ধন অজেয় অর্থাৎ কেউ জয় করতে পারে না। মৃত্যুর পর এটিই অনুগামী হয়।

অন্য সব পার্থিব সম্পদ পরিত্যাগ করো এটিকে নিয়ে পরলোকে গমন করতে হয়। তাই এটিকে অজেয় অনুগামী নিধি বলা হয়। 

৯. এটি অন্যের অধিকারের বাইরে, এটি চোরে চুরি করতে পারে না, 

যে পুণ্যসম্পদ পরলোক পর্যন্ত যায়, পণ্ডিত ব্যক্তি সেই পুণ্য কর্মই সম্পাদন করেন। 

১০. এই পুণ্যধন দেব-নরগণের সকল কামনা পূর্ণ করে, 

যা যা প্রার্থনা করা হয়, এটির দ্বারা সব লাভ হয়। 

১১. উত্তম দেহবর্ণ, সুমধুর কণ্ঠস্বর, অঙ্গ-সৌষ্ঠব, সৌন্দর্য, আধিপত্য ও 

পরিবার সম্পদ (আত্মীয়স্বজন) সকল এটির দ্বারা লাভ হয়।

১২. প্রদেশের রাজত্ব ঐশ্বর্য প্রিয় রাজচক্রবর্তী সুখ, 

স্বর্গের দেবাধিপত্য (ইন্দ্রত্ব) সমস্তই এটির দ্বারা লাভ হয়। 

১৩. মানবীয় সুখ-সম্পদ, দেবলোকের যে দিব্য সুখ এবং

নির্বাণের যেই অবিনশ্বর আনন্দ (সম্পদ) সমস্তই এটির দ্বারা লাভ হয়।

১৪. কল্যাণ মিত্র লাভ করে সজ্ঞানে যিনি যোগানুষ্ঠান করেন, 

তাঁর বিদ্যা, বিমুক্তি, বশ্যতা (ঋদ্ধি) সমস্তই এটির দ্বারা লাভ হয়। 

১৫. চার প্রতিসম্ভিদা (অর্থ, ধর্ম, নিরুক্তি ও প্রতিভাবান), আট বিমোক্ষ (শূন্যতা, অনিমিত্ত, অপ্রনিহিত, চার অরূপ সমাধি ও সংজ্ঞা-বেদয়িত নিরোধ সমাধি) শ্রাবক-পারমী, প্রত্যেক বুদ্ধত্ব, সম্যক সম্বোধি প্রভৃতি এর দ্বারা লাভ হয়। 

১৬. যেহেতু উক্ত পুণ্য সম্পদ সকল এরকম মহাঋদ্ধিসম্পন্ন, 

তাই ধীর ও পন্ডিত ব্যক্তিগণ পুণ্যকর্ম সম্পাদনের প্রশংসা করেন।

 

 

শব্দার্থ: নিধিং নিধি বা ধন; গম্ভীরে ওদকন্তিকে গভীর জলস্পর্শী গর্তে; রাজাতো বা দুরুত্তপ্স রাজার দৌরাত্ম্য, চোরতো পীলিতপ্স বা চোরের উৎপীড়ন; দুত্তিচ্ছে দুর্ভিক্ষে; আপদাসু আপদকালীন; বিমুহতি - বিমূঢ় বা মতিভ্রম; অপনামেন্তি অপসারণ; নাগা নাগ; য্যা যক্ষ; সংযমেন সংযম; ইথিয়া - স্ত্রীলোক; পুরিসম্স- পুরুষ; চেতিযস্থি চৈত্য; অতিথীসু অতিথি; ভাতরি ভাই; অজেয্যো অজেয়; অনুগামিকো - অনুগমণকারী; অসাধারনমঞেঞসং অসাধারণ; আধিপচ্চপরিবারো আধিপত্য পরিবার; পটিসন্তিদা- প্রতিসম্ভিদা; বিমোচ্ছা বিমোক্ষ: পসংসন্তি প্রশংসা করে।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩৫

ধর্মীয় বই, ইন্টারনেট বা অনান্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দলীয়ভাবে নিধিকন্ড সূত্র বিষয়ে তথ্যবৃক্ষ তৈরি করি।

 

নিধিকন্ড সূত্রের গুরুত্ব

 

অর্থ বা সম্পদ ভবিষ্যতে আমার কাজে লাগবে এ চিন্তা করে অতীতকালে মানুষেরা গভীর গর্তে ধন বা নিধি পুঁতে রাখতেন। উত্তমরূপে পুঁতে রাখা ধন বা নিধি রাজার দৌরাত্ম্য, চোরের উৎপীড়ন, ঋণ ও দুর্ভিক্ষের কারণে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় ধন স্থানচ্যুত হতে পারে। নাগ ও যক্ষ এবং অপ্রিয় উত্তরাধিকারীরা এই নিধি অপহরণ করতে পারে। পুণ্যক্ষয় হলে এমনিতেই এ সমস্ত সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে বুদ্ধের উপদেশ হলো এ জাগতিক অর্থ বা ধন প্রকৃত সুনিহিত নিধি বা ধন নয়। দান শীল, সংযম, দম, চৈত্য, প্রতিষ্ঠা, সংঘ, মাতা- পিতা, অতিথি, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা-ভগ্নির সেবায় যে ধন বা পুণ্যনিধি নিয়োজিত হয় সে ধনই প্রকৃত সুনিহিত নিধি বলা যায়। কারণ এটি অজেয় ও অনুগামী নিধি। অন্যান্য ধন পরলোকে গমন করবার সময় নিয়ে যেতে পারে না কিন্তু এ পুণ্য সম্পদ ইহকালেও ভোগ করে পরকালেও অনুগমন করে। পূণ্য সম্পদ কেউ কেড়ে নিতে পারে না। আবার এটি যেহেতু মৃত্যুর সাথে সাথে অনুগমন করে পরবর্তীতে তিনি এ পুণ্যসম্পদের কারণে তার প্রার্থীত যাবতীয় মনস্কামনা পূর্ণতা সাধন করতে পারে। তাই বর্তমান যুগেও শুধুমাত্র টাকা-পয়সা বা বিশাল সম্পদের পিছনে জীবনের অধিকাংশ সময় নষ্ট না করে দান, শীল, ভাবনা, পরোপকারিতা, মানবিক মূল্যবোধের মাধ্যমে জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার শিক্ষা নিধিকণ্ড সূত্র থেকে আমরা লাভ করতে পারি।

 

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩৬

নিধিকণ্ড সূত্রের কোন কোন বিষয় নিজ জীবনে কীভাবে প্রয়োগ বা চর্চা করবে তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করো।

নিধিকণ্ড সূত্রের কোন কোন

বিষয় নিজ জীবনে প্রয়োগ

বা চর্চা করবে

কীভাবে প্রয়োগ বা চর্চা করবে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩৭

নিধিকণ্ড সূত্রের কোন কোন বিষয় অন্যদেরও কীভাবে চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে তার একটি পরিকল্পনা তৈরি কর।

 

নিধিকণ্ড সূত্রের কোন কোন

বিষয় অন্যদেরও চর্চা

করতে উদ্বুদ্ধ করবে

কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

 

ধর্মপদ গ্রন্থের পরিচয়

 

ধর্মপদ সূত্র পিটকের অন্তর্গত খুদ্দক নিকায়ের দ্বিতীয় গ্রন্থ। এটি একটি কাব্যগ্রন্থ। ধর্ম পদে ৪২৩টি গাথা এবং ২৬টি বর্গ রয়েছে। এর গাথাগুলির বেশির ভাগ ত্রিপিটকের বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। প্রত্যেকটি গাথা স্বতন্ত্র এবং নিজস্ব রীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মনীষীবৃন্দ ধর্মপদের গাথাসমূহের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গ্রন্থটি আজও বিশ্বমানবের চিত্তকে গভীর ও নিবিড়ভাবে আকর্ষণ করে। অতীতে এ গ্রন্থ সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত এ তিনটি ভারতীয় ভাষাতেই প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় গ্রন্থটি অনুবাদ করা হয়েছে।

 

'ধর্মপদ'-এর 'ধর্ম' ও 'পদ' শব্দ দুটি বিভিন্ন অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে। ধর্মপদের 'ধর্ম' শব্দের অর্থ 'নীতি', 'মূলনীতি', 'বিষয়', 'পুণ্য' এবং 'পদ' শব্দের অর্থ 'কারণ', 'পদক্ষেপ', 'পথ', 'গুচ্ছ', 'শ্লোক' প্রভৃতি। ধর্মপদ গ্রন্থের নাম নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেখা যায়। যেমন: 'পুণ্যের পথ', 'ধর্মের পথ', 'সত্যের পথ' প্রভৃতি।

 

ধর্মপদের উপদেশ সর্বকালীন এবং বিশ্বজনীন। গ্রন্থটি জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে সমাদৃত হয়েছে। ধর্মপদের অমৃতবাণী মানব কল্যাণ আর বিশ্বমৈত্রীর মূর্ত প্রতীক। বাণীগুলো মানব জীবনকে ক্ষুদ্র সত্তা থেকে মুক্ত করে অসীমের সন্ধানে মহত্ত্বের দিকে নিয়ে যায়। জীবনকে সম্যক উপলব্ধির জন্য নীতিবাক্যসমূহের গুরুত্ব অপরিসীম। ধর্মপদের আবেদন অনেক প্রাণস্পর্শী। ধর্মপদ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থ, এটি ভারত উপমহাদেশকে পৃথিবীতে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

ধর্মপদ গ্রন্থের নৈতিক গুরুত্ব

 

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তনের যুগে সাধারণভাবে প্রচলিত রীতি ও ধর্ম বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ধর্মপদ সংকলিত হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মবোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে দান, শীল, ভাবনায় অনুপ্রাণিত করা; ত্রিরত্নের প্রতি শ্রদ্ধা উৎপাদন, ইন্দ্রিয় সংযমের উপকারিতা, চিত্ত শাসনের সুফল ইত্যাদি বিষয় অতি সহজ, সরল ভাষায় ধর্মপদে আলোকপাত করা হয়েছে। এতে যুক্তির মাধ্যমে প্রকৃত মানবের স্বরূপ, বৌদ্ধ ভিক্ষুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, পাপ-পুণ্যের কার্যকারিতা, মৈত্রীর প্রয়োজনীয়তা এবং বৈরিতার পরিণাম সম্পর্কে মানব সমাজকে সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। মূলত ধর্মপদ নামের মধ্যেই রয়েছে গ্রন্থের মূল বক্তব্য। বৌদ্ধ ধর্মের নির্ধারিত পথ অনুসরণ করার জন্যে ধর্মপদ পাঠের উপযোগিতা অনস্বীকার্য। এ গ্রন্থের নিবেদন হলো ধর্মের মাধ্যমে জনগণের নৈতিক জীবন গঠন করা। মানব মনের সুকুমার বৃত্তির প্রকাশ এবং উন্নত মননশীলতার আদর্শ প্রচার করা।

ধর্মপদে বৌদ্ধ দর্শনের সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপিত হয়েছে। এতে যে কয়টি শ্রেষ্ঠ বিষয়ের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: চার আর্যসত্য, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, ক্ষান্তি, বিরাগ, মৈত্রী, সহিষ্ণুতা ও নির্বাণ। চতুরার্য সত্য হলো দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখ নিরোধ এবং দুঃখ নিরোধের উপায়। এখানে প্রথম আর্যসত্য দুঃখ বলতে বোঝায় জন্ম, জরা, ব্যাধি, মৃত্যু, শোক-বিলাপ, অপ্রিয় সংযোগ, প্রিয় বিয়োগ এবং আশার অতৃপ্তিজনিত দুঃখ। বলতে গেলে পঞ্চস্কন্ধরূপ মানব দেহ ধারণই দুঃখ। ধর্মপদের একাদশ অধ্যায়ে দেহকে বলা হয়েছে- কতগুলো পচনশীল উপাদানের সমষ্টি, ব্যাধি ও অশেষ দুঃখ-যন্ত্রণার আগার; রোগ-শোক ও জরা তার নিত্য সঙ্গী। আর তার থেকেই দুঃখের ক্রমাগত সৃষ্টি।

সকল দুঃখের কারণ হলো তৃষ্ণা। বেদনা বা অনুভূতি থেকে তৃষ্ণার উৎপত্তি। তৃষ্ণা মানুষকে জন্ম, মৃত্যুরূপে দুঃখ চক্রে আবর্তিত করে, বন্ধনের ভার বৃদ্ধি করে। কামতৃষ্ণা, ভবতৃষ্ণা এবং বিভব তৃষ্ণার মতো, তৃষ্ণাজাল থেকে অবশ্যই মুক্তি পেতে হবে। তৃষ্ণাজয়ের মধ্যেই পঞ্চস্কন্ধ জয়ের চাবিকাঠি। কিভাবে তৃষ্ণাকে জয় করে জন্ম জরা ব্যাধি মৃত্যু শোক প্রভৃতির উপশম করা যায় তার ইঙ্গিত এ গ্রন্থে আছে।

দুঃখের নিরোধ হলো নির্বাণ। একমাত্র নির্বাণে দুঃখের অস্তিত্ব বিলোপ হয়। নির্বাণ পরম সুখ। এটি উপলব্ধির বিষয় এবং অনির্বচনীয়। ধর্মপদে নির্বাণকে বলা হয়েছে যোগক্ষেম, অব্যাখ্যাত, জাতিক্ষয়, অমৃতপদ এবং সংস্কার উপশমকারী। দুঃখ নিরোধের উপায় হলো- নির্বাণ লাভ করা। শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার পূর্ণতা বিধান ছাড়া নির্বাণ লাভ করা সম্ভব নয়। শীল পালনের দ্বারা কায়-বাক্য-মনের পবিত্রতা সাধন এবং পবিত্র মনে স্মৃতি সাধনায় বিরত থাকলে প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়। প্রজ্ঞা ভাবনার মাধ্যমে তৃষ্ণাক্ষয়ে সকল দুঃখের অন্ত নির্বাণ উপলব্ধি হয়। তাই ধর্মপদের নৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।

 

ধর্মপদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গাথা এবং বাংলা অনুবাদ নিচে দেওয়া হলো:

 

১. 'অক্কোচ্ছি মং, অবধি মং, অজিনি মং, অহাসি মে' 

যে চ তং উপনযহন্তি বেরং বেরং তেসুপসম্মতি।

 

বাংলা- আমাকে আক্রোশ করল, আমাকে প্রহার করল, আমাকে পরাজয় করল কিংবা আমার (সম্পত্তি) হরণ করল, যারা এমন চিন্তা পোষণ করে না, তাদের শত্রুতার উপশম হয়।

 

২. নহি বেরেন বেরানি সম্মন্তী'ধ কুদাচনং 

অবেরেন চ সম্মন্তি এস ধম্মো সনন্তনো।

 

বাংলা- জগতে শত্রুতার দ্বারা কখনো শত্রুতার উপশম হয় না, 

মিত্রতার দ্বারাই শত্রুতার উপশম হয়; এটাই চিরন্তন ধর্ম।

 

 

৩. সারঞ্চ সারতো ঞতা, অসারঞ্চ অসারতো, 

তে সারং অধিগচ্ছন্তি, সম্মাসংকল্পগোচরা।

 

বাংলা- যারা সার বস্তুকে সার এবং অসারবস্তুকে অসাররূপে জানেন,

 সেই সম্যক সংকল্পপরায়ন ব্যক্তিরা প্রকৃত সারবস্তু লাভ করতে সমর্থ হন।

 

 

৪. অল্পমাদো অমতপদং, পমাদো মজুনো পদং 

অপ্রমত্তা ন মীয়ন্তি, যে পমত্তা যথামাতা। 

 

বাংলা- অপ্রমাদ অমৃত লাভের উপায়, প্রমাদ মৃত্যুর পথ, 

অপ্রমত্ত ব্যক্তিরা অমর আর যারা প্রমত্ত তারা মৃতস্বরূপ।

 

৫. ন পরেসং বিলোমানি ন পরেসং কতাকতং, 

অত্তনো'ব অবেন্ধেয্য কতানি অকাতানি চ। 

 

বাংলা- পরের বিচ্যুতির প্রতি কিংবা পরের কৃত ও অকৃত কার্যের প্রতি লক্ষ্য করবে না, 

নিজের কৃত ও অকৃত কার্যাদির প্রতি দৃষ্টি রাখবে।

 

৬. মধু'ব মঞ্চতি বালো যাব পাপং ন পদ্ধতি, 

যদা চ পচ্চতি পাপং অথ বালো দুস্খং নিগচ্ছতি। 

 

বাংলা- যতদিন পাপ পরিণতি লাভ না করে ততদিন মূর্খ সেটিকে মধুময় মনে করে, 

কিন্তু পাপ যখন পরিণত হয় তখন মূর্খকে দুঃখ ভোগ করতে হয়।

 

 

৭. ন ভজে পাপকে মিত্তে ন ভজে পুরিসাধমে, 

ভজেথ মিত্তে কল্যাণে ভজেথ পুরিসুত্তমে। 

 

বাংলা- পাপী মিত্রের সংসর্গ করবে না, নরাধম ব্যক্তির সংসর্গ করবে না: 

কল্যাণমিত্রদের ও পুরুষোত্তমদের সংসর্গ করবে। 

 

৮. যো সহপ্সং সহস্পেন সঙ্গামে মানুসে জিনে

একঞ্চ জেয়্যমত্তানং স বে সঙ্গামজুত্তমো। 

 

বাংলা- যে ব্যক্তি সংগ্রামে সহস্র সহস্র মানুষকে জয় করে তার তুলনায় 

যিনি কেবল নিজেকে জয় করেন, তিনিই সর্বোত্তম সংগ্রামজয়ী।

 

৯. যো চ বস্সসতং জীবে দুস্সীলো অসমাহিতো, 

একাহং জীবিতং সেয়্যো সীলবন্তস্স ঝাযিনো। 

 

বাংলা- যে ব্যক্তি দুশ্চরিত্র ও অসমাহিত হয়ে শতবর্ষ জীবিত থাকে, 

তার জীবন অপেক্ষা সচ্চরিত্র ধ্যানী ব্যক্তির এক দিনের জীবনও শ্রেয়।

 

১০. যো চ বস্সসতং জীবে কুসীতো হীনবীরিযো, 

একাহং জীবিতং সেয়্যো বিরিয়মারভাতো দহুং। 

 

বাংলা- যে ব্যক্তি অলস ও হীনবীর্য হইয়া শতবর্ষ বেঁচে থাকে, 

তার জীবন অপেক্ষা দৃঢ়পরাক্রম ও বীর্যপরায়ণ পুরুষের একটি দিনের জীবনও শ্রেয়।

 

১১. ন অন্তলিক্সে ন সমুদ্দমন্ত্রে 

ন পববতানং বিবরং পবিস্স, 

ন বিজ্ঞতি সো জগতিপ্পদেসো 

যথষ্টিতো মুঞ্চেয়্য পাপকম্মা।

 

বাংলা- অন্তরীক্ষে, সমুদ্রমধ্যে কিংবা পর্বত গুহা যেখানেই প্রবেশ করো না কেন, 

জগতে এমন স্থান নেই যেখান থেকে পাপকর্ম (ফলভোগ) হতে মুক্তি পাওয়া যায়।

 

১২. সক্সে তসন্তি দন্ডন্স সব্বে ভায়ন্তি মজুনো, 

অত্তানং উপমং কতা না হনেয়া না ঘাতয়ে। 

 

বাংলা- সবাই দণ্ডকে ভয় করে, মৃত্যুর ভয়ে সবাই সন্ত্রস্ত, 

নিজের সাথে তুলনা করে কাউকে আঘাত কিংবা হত্যা করবে না।

 

১৩. অভাহি অত্তনো নাখো কোহি নাথো পরো সিয়া? 

অত্তনা'ব সুদন্তেন নাথং লভতি দুল্লভং। 

 

বাংলা- নিজেই নিজের নাথ (ত্রাণকর্তা); এছাড়া অপর কে কার নাথ? 

সুদান্ত ব্যক্তি আপনার মধ্যেই দুর্লভ আশ্রয় লাভ করেন।

 

১৪. উত্তিষ্ঠে নপ্তমজ্জেয্য ধম্মং সুচরিতং চরে, 

ধম্মাচারী সুখং সেতি অস্মিং লোকে পরহি চ। 

 

বাংলা- উদ্যম করো, প্রমত্ত হয়ো না। উত্তমরূপে ধর্ম আচরণ করো। 

ধর্মাচারী ইহলোক ও পরলোকে সুখে অবস্থান করে।

 

১৫. সঞ্চাপাপপ্স অকরণং কুসলসস উপসম্পদা, 

সচিত্তপরিযোদপনং এতং বুদ্ধানসাসনং। 

 

বাংলা- সমস্ত পাপ থেকে বিরতি (শীল), কুশল কর্মের পরিপূর্ণতা (প্রজ্ঞা) 

ও স্বীয় চিত্তের পবিত্রতা সাধন (সমাধি)-এটিই বুদ্ধের অনুশাসন।

 

১৬. আরোগ্য পরমা লাভা সন্তষ্টি পরমং ধনং, 

বিস্সাসপরমা জ্ঞাতী নিব্বানং পরমং সুখং। 

 

বাংলা- আরোগ্য পরম লাভ; সন্তোষ পরম ধন; বিশ্বস্ত লোকই পরমাত্মীয় এবং নির্বাণই পরম সুখ।

 

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩৮

ধর্মীয় বই, ইন্টারনেট বা অন্যন্য উৎস থেকে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দলীয়ভাবে ধর্মপদের কয়েকটি নীতিগাথা বিষয়ে তথ্যবৃক্ষ তৈরি করি।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৩৯

ধর্মপদের কয়েকটি নীতিগাথার কোন কোন বিষয় নিজ জীবনে কীভাবে প্রয়োগ বা চর্চা করবে তার একটি পরিকল্পনা তৈরি কর।

ধর্মপদের কয়েকটি

নীতিগাথার কোন কোন

বিষয় নিজ জীবনে প্রয়োগ

কীভাবে প্রয়োগ বা চর্চা করবে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৪০

ধর্মপদের কয়েকটি নীতিগাথার কোন কোন বিষয় কীভাবে অন্যদেরও চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করো

 

ধর্মপদের কয়েকটি

নীতিগাথার কোন কোন

বিষয় অন্যদেরও চর্চা

করতে উদ্বুদ্ধ করবে

কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

Content added || updated By

অংশগ্রহণমূলক কাজ ৪১

 

** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।

ফিরে দেখা: নিচের তালিকার সকল কাজ কি আমরা শেষ করেছি? হ্যাঁ হলে হ্যাঁ ঘরে এবং না হলে না এর ঘরে (✔) চিহ্ন দাও।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ নং

সম্পূর্ণ করেছি

হ্যাঁ

না

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Content added || updated By
Promotion